কেউ বলে নববর্ষের মানে জীবনকে নতুন করে আর একবার পাওয়া। উপলব্ধির আচ্ছাদনকে নতুন করে আরো একবার মোড়ক উন্মোচন। স্মৃতি-বিসৃত অতীতকে পেছনে ফেলে জীবনের আহ্বানে জয়গানে নতুন স্লোগানের সুর তুলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।
আবার কেউ বলে, এ অধম, অনা সৃষ্টি, যুপকাঠে বলি দেওয়া যায় এমন কিছু।
তবে যে যাই বলুক, এই নববর্ষের সাথেই ওতপ্রোত জড়িয়ে আছে আমার এক অবিসৃত্ন ঘটনা। যা শুনতে রূপকথার গল্পের মতই মনে হয়।
Happy new year টু থাওজেন্ট ওয়ান। আমার পাঁচ তলার চিলে কোঠার সামনে বসে ছিলাম চেয়ার পেতে। সিগারেট ফুঁকছিলাম। আর দেখছিলাম আমার ফাটা দেওয়াল আর সোঁত সাঁতে ছাদ। ধোয়া উড়িয়ে দিচ্ছিলাম বাতাসের শূন্যটায়।
শেষ বিকেলে ইস্টকবন্ধন ঢাকা শহর ছিল কিছুটা নীরব, কোলাহল মুক্ত ঢাকা শহর। তবে ঠিক সে সময়ে আমি কি ভাবছিলাম আজ প্রায় এক যুগ পরে এসে নিশ্চিত করে বলতে পারব না।
তখনি সিঁড়িতে আমি একজনের পদধ্বনি শুনতে পেলাম। এই মেয়েটি দেখে ফেলল, আমি ধোয়া ছাড়ছি। আর হেসে বলে উঠল, আপনিও... সিগারেট... আশ্চর্য... সম্পূর্ণ অপরিচিত একটা মেয়ে। যাকে দেখিনি আগে কখনও, তার এই তাচ্ছিল্যের হাসিতে আমি কিছুটা অপ্রকস্থিত হয়ে সিগারেট ফেলে দিলাম।
শিমুলের সে দিনকার ঐ গালভরা হাসি আমার জীবনকে পাল্টে দিয়েছিল। নিচের ফ্লাটে চাচা বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। ও চলে যাওয়ার পর মুঠোফোনে কথা হত।
অনেক কথা... পলিটিক্স থেকে শুরু করে করে ওর_ আমার আরো কত কথা।
একদিন SMS করল এন কিছু যা I Love you থেকে অনেক বেশী অর্থ বহন করে। আমিও হয়ত মনে মনে এটাই চাচ্ছিলাম। আমিও বললাম I Love you
প্রেম এতদিন নেপথ্যের আড়ালে ছিল। আজ সে আবরণ উড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিনের পৃথিবীর সমস্ত তুচ্ছতা আজই যেন অন্তর্হিত হল। এ দালান কোঠা, আমার আলমারির মত ছোট ঘরের অগোছল জিনিষ-পত্র, পথের জনতা, শহরের কোলাহল সবকিছুই আজ অপরূপ লাগছে।
শিমুলের সাথে মাঝে মাঝে তর্ক জুড়তাম। ও বলত ভালোবাসা চাঁদের মত, যখন পূর্ণতায় পৌঁছে তখন কমতে থাতে। আমি বলতাম ভালোবাসা ফিনিক্স পাখি_ জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যায় আবার জীবিত হয়ে উড়তে থাকে।
ও বলত, ভালবাসা হল কষ্ট আর যন্ত্রণা। আমি বলব কষ্টের আবরণে ঢাকা অজস্র সুখ। এ ছয় সাতটি মাস কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। চলে এলো ‘শুভ নববর্ষ’ পহেলা। শিমুল আমাকে আগেই বলে রেখেছিল। এদিনে যেন সারা দিনে যেন সারাদিন আমি ওর সাথে থাকি।
সাত সকালে চোখ টলতে টলতে আমি রমনা বটমূলে পৌঁছলাম। শিমুলও পৌছাতে দেরি করল না। পহেলা বৈশাখের এ ভোরে সেদিন হয়ে উঠেছিল প্রাণবন্তর, চঞ্চল, সতেজপূর্ন, লোকে লোকারণ্য পান্তা আর ইলিশ ভাজা খাওয়ার ধুম। ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর আনন্দের সীমা নেই। ধনী গরীবের প্রভেদ করা দায়। সবাই লাল পেড়ে সাদা শাড়ী আর লাল ব্লাউজ পরেছে_ সাথে ম্যাচ করা অলংকারের ঝুনঝুনানি, যেন স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে লাল পরীর ঝাঁক। আর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাদা ইউনিফর্মধারী অসংখ্য রক্ষণকারি (সেনাবাহিনী)। আজ সারা দিন তারা নববর্ষকে বরণ করবে। এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াবে। কোথাও বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে শোভামণ্ডিত করবে। তারপর শুভ সন্ধ্যায় আবার স্বর্গে ফিরে যাবে। আমি আর শিমুল দুটি করে ইলিশ ও কিছু পান্তা খেলাম।
আমাকে বলল, চল দূরে কোথাও যাই। আমি বললাম কোথায় যাবে? ও বলল, চল- সিলেট যায়- জাফলং রাত্রর মধ্যেই ফিরে আসবো। আমি না করতে পারলাম না। গাড়ীতে উঠলাম, বারটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম।
খুনসুটি, ছুটাছুটি আর ঝর্ণাধারা দেখতে দেখতে বেলা প্রায় ২টা গড়াল। ও বলল, আস সুইমিং করি। আমি বললাম, তুমি নামো, আমি আসছি_ লঞ্চ কিনে এনে রেখেছি... ১০মিনিট। এসে দেখছি মানুষ জটলা পাকিয়ে কি যেন দেখছে। আমি ভিড় ঠেলে সামনে গেলাম, দেখলাম, দেখলাম_ আমার শিমুল চিৎ হয় শুয়ে আছে। পেট উঁচু হয়ে আছে। আর কিছু লোক বাঁচানোর জন্য অযথা চেষ্টা করছে। আমি নিশ্চল দাড়িয়ে রইলাম।
ও বলেছিল তাড়াতাড়ি ফিরে এসে। আজ আমাকে রেখে কত দূরে চলে গেল। নববর্ষের বিকালের এই ট্রাজেডি আমাকে তাড়া করে ফেরে। নববর্ষে বরণ করে নেব নাকি বর্জন করব ভেবে পাই না।
না... নববর্ষ! তুমি শুভ, তুমি পবিত্র, তুমি অকল্যাণই নো। ওটা ছিল আমার অদৃষ্ট, আমার নিয়তি।
৩১ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪